চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দুই কৃষক পরিবারে চলছে শোকের মাতম

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑

সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত কৃষক বাবুলের নির্বাক মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা।

 

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দুই কৃষক পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের উপার্যক্ষম অভিভাবকদের হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শংঙ্কায় পড়েছেন দু’পরিবার।

গত বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বুড়ির দোকান এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও যাত্রীবাহি লেগুনা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় লেগুনার ৭ যাত্রী। তাদের মধ্যে নিহত সিরাজ আহমদ ও মো.বাবুল চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা। পেশায় তারা দু’জনই দিনমজুর। বুধবার কাজ শেষে পরিবারের জন্য সওদা করে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে যাত্রীবাহি লেগুনা গাড়ি নিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চকরিয়ায় ফিরছিলেন তারা। প্রতিদিনকার আয় রোজগার দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোটামুটি ভালোই কাটছিলো দুই কৃষক পরিবারের। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পরিবারের দুই কর্তাব্যক্তিকে হারিয়ে তাদের সংসারে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।

এদিকে বুধবার রাতে নিহতের স্বজনরা চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে লাশ গ্রহনের পর বৃহস্পতিবার সকালে নামাজে জানাযা শেষে তাদেরকে স্থাণীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহত সিরাজের নিকটাত্নীয় নাজিম উদ্দিন নাজু বলেন, সিরাজ ও বাবুল দুইজনই দিনমজুরের কাজ করতেন। তাদের মধ্যে সিরাজের স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সিরাজের এক ছেলে বিদেশ প্রবাসী। অন্য দুই ছেলে ও এক মেয়ে বাড়িতে থাকেন। সিরাজের দুই ছেলে দিনমুজরের কাজ করে সংসারের খরচে যোগান দেয়ায় মোটামুটি ভালোই চলছিলো তাদের সংসার ।

অপরদিকে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মো. বাবুলও দিনমজুরের কাজ করতেন। সংসারের খরচ জোগাতে কাজের সন্ধানে এলাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন তিনি। বাবুলের সংসারে স্ত্রী, ছোট এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সিরাজের সংসারে আয় রোজগারের জন্য ছেলেরা থাকলেও বাবুলের পরিবারের রোজগার করার মতো কোন লোকজন নেই। ছোট ছোট শিশুরা তাদের ভরসাস্থল প্রিয় বাবাকে হারিয়ে নির্ভাক হয়ে মায়ের দিকে চেয়ে আছেন। স্বামীর শোকে মূহ্যমান মো.বাবুলের স্ত্রীকে শান্তনা দিয়েও থামানো যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কোনাখালী ইউনিয়নে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দুই কৃষক পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বাবাকে হারিয়ে সন্তানেরা যেমন বিলাপ ধরে কান্না করছেন, আবার স্বামী হারিয়ে তাদের স্ত্রীরাও মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। নিহতদের বুকফঁাটা আর্তনাতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পাড়া-প্রতিবেশিরা তাদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলেও কোনে কাজে আসছেনা। পিতাহারা সন্তানেরা একজন অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছেন। তাদের কান্নায় পাড়া প্রতিবেশিরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেনা।

বানিয়ারছড়াস্থ চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো.আনিসুর রহমান বলেন, বুধবার সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের লাশ সনাক্তের পর ওইদিন রাতেই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাভার্ডভ্যানের অজ্ঞাতনামা চালক ও হেলফারের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সে বিষয়টিও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত: গত বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বুড়ির দোকান এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও যাত্রীবাহি লেগুনা পরিবহণের মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনা গাড়ির চালকসহ ওই গাড়ির ৭ যাত্রী নিহত এবং দুইজন আহত হয়।

নিহতদের মধ্যে দুইজন চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের, দুইজন পার্বত্য লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের এবং অপর দুইজন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া এ ঘটনায় নিহত অপর একজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। দূর্ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানে ৬জন যাত্রী এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো এক যাত্রী মারা যায়।

আহত অন্য দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করার পর এদিন রাতেই নিহতদের লাশ পর্যায়ক্রমে তাদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ।